শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

আপডেট
১৬ জেল সুপারকে বদলি- বিএনপির নেতাকে হত্যার চেষ্টার আসামী রফিকুল কাদেরকে গাজীপুর জেলা কারাগারে জেল সুপার হিসাবে পদায়ন

১৬ জেল সুপারকে বদলি- বিএনপির নেতাকে হত্যার চেষ্টার আসামী রফিকুল কাদেরকে গাজীপুর জেলা কারাগারে জেল সুপার হিসাবে পদায়ন

জাহাঙ্গীর আলম : দেশের ১৬ জেল সুপারকে বদলি করা হয়েছে। বুধবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে তাদের বদলি করা হয়। বদলি করা কর্মকর্তারা হলেন- খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ রফিকুল কাদের, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, শেরপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবীর খান, নড়াইল জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মজিবুর রহমান, পাবনা জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. নাসির উদ্দিন প্রধান, গাইবান্ধা জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. জাবেদ মেহদী, লালমনিরহাট জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. ওমর ফারুক ও বগুড়া জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. আনোয়ার হোসেন। এছাড়া বদলি করা অন্যরা হলেন- রাজবাড়ী জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ আব্দুর রহিম, কুষ্টিয়া জেলা কারাগারের জেল সুপার আব্দুল বারেক, নোয়াখালী জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. গোলাম দস্তগীর, সুনামগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার মোহাম্মদ শফিউল আলম, কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগারের জেল সুপার ফারুক আহমেদ, কক্সবাজার জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. শাহ আলম খান, গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. মাইন উদ্দিন ভূঁইয়া এবং খাগড়াছড়ি জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. এনামুল কবির।

এদিকে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগে ও পরে দেশের কারাগারগুলোতে নজিরবিহীন বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এ সময় কারারক্ষীদের গুলিতে ১৩ জন বন্দি নিহত হন। আহত হন দুই শতাধিক কারারক্ষী। কারগারের অস্ত্র, গোলা বারুদ থেকে শুরু করে চাল-ডাল পর্যন্ত লুট করা হয়। কারা সূত্র জানায়, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় দেশের ১৭টি কারাগারে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে পাঁচটি কারাগার থেকে দুই হাজারের বেশি বন্দি পালিয়ে যান। তাঁদের মধ্যে অনেক বন্দি ফিরে আসেন। কারা সূত্র জানায়, আন্দোলনের সময় ১৭টি কারাগারের মধ্যে আটটি কারাগার বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর পাঁচটি কারাগার থেকে বন্দি পালিয়েছেন। কারাগার থেকে জঙ্গি ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯৮ জন পালিয়ে যান। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত জঙ্গি ছিলেন ৯ জন। এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মতো বিচারাধীন জঙ্গি পলাতক রয়েছেন। এ ছাড়া খোয়া যাওয়া ৬৫টি অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। এখনো ২৭টি অস্ত্রের হদিস মেলেনি। আন্দোলনের সময় বিভিন্ন কারাগারে বিশৃঙ্খলায় ২৮২ জন কারারক্ষী আহত হন।

কারা সূত্র জানায়, গত জুলাইয়ে অভ্যুত্থানে উত্তাল ছিল বাংলাদেশ। আগস্টে সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ের মাধ্যমে তা থিতু হয়। দেশ থেকে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৫ আগস্ট বিটিভিতে এ সংবাদ দেখে জেল থেকে পালাতে বিক্ষোভ করতে থাকেন বন্দিরা। ৬ আগস্ট সফলও হয় অন্তত দেড় হাজার বন্দি। সাতক্ষীরা, শেরপুর, গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে দেড় হাজার বন্দি পালানোর আগেই ১৯ জুলাই নরসিংদীর কারাগার থেকে পালিয়ে যান ৮২৬ জন বন্দি। কারাগারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে কাশিমপুর,খুলনা,গাইবান্দা ও জামালপুর কারাগারে। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ পরিস্থিতিতে গত ৮ আগস্ট গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারে বিদ্রোহ শুরু করেন বন্দিরা। তাঁরা গেট ভেঙে ও দেয়াল টপকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একই দিন দুপুরে খুলনা,গাইবান্দা,শেরপুর কারাগারের ভেতর বন্দিরা বিদ্রোহ শুরু করেন। একই দিন কুষ্টিয়া জেলা কারাগার ফটকের তালা ভেঙে শতাধিক বন্দি পালিয়ে গেছেন। বন্দিদের মারধরে প্রায় ২৫ কারারক্ষী আহত হন।

অন্যদিকে গত ৭ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘিরে আটক হওয়া আসামিরা রাষ্ট্রপতির নির্বাহী আদেশে সিরাজগঞ্জ কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার সময় অন্য আসামিরাও মুক্ত হওয়ার জন্য কারা অভ্যন্তরে বিক্ষোভ শুরু করেন, যা ছিল নজিরবিহীন ঘটনা। যেসকল কারাগারের ভেতর বন্দিরা বিদ্রোহ করেন এমন জেল সুপারদের গুরুত্বপুর্ন কারাগারে পদায়ন করা হয়েছে। যেমন খুলনা জেলা কারাগারের জেল সুপার রফিকুল ইসলাম কাদেরের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও রূপসার শ্রীফলতলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এস এম মনিরুল হাসান (বাপ্পী) বাদী হয়ে চলতি বছরের ২৪ এপ্রিল মামলাটি করেন। খুলনার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি দায়ের করেছেন তিনি। মামলার আরজিতে বলা হয়েছে, বাদী মনিরুল হাসানের বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ৬ নভেম্বর রূপসা থানায় নাশকতার অভিযোগে একটি মামলা হয়।

ওই মামলায় উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেন তিনি। এরপর গত ২৪ এপ্রিল তিনি আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করলে আদালত জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান। কারাগারে থাকা অবস্থায় গত ৩ মে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেলের চিকিৎসক ইসিজি করে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বলে জানান। তিনি জেল সুপার, জেলার ও চিকিৎসককে বাইরে কোনো হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করার অনুরোধ জানান। কিন্তু তাঁরা বাইরে চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে ইচ্ছাকৃতভাবে তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে থাকেন। এ ছাড়া তাঁরা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও নেতাদের বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্য করেন। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়ে ৬ মে মনিরুল হাসান কারাগার থেকে বের হয়ে পরদিন খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানকার চিকিৎসক জানান, সময়মতো চিকিৎসা না পাওয়ায় তাঁর শারীরিক অবস্থা জটিল। তাঁকে ঢাকায় চিকিৎসা নেওয়ার জন্য বলা হয়। পরে ২১ মে তিনি ঢাকার ল্যাবএইড হাসপাতালে ওপেন হার্ট সার্জারি করান। বাদী মনে করেন, সঠিক সময়ে চিকিৎসা পেলে তাঁর ওপেন হার্ট সার্জারি করতে হতো না। বাদী জানান, তাঁকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যার চেষ্টা করায় এই মামলা দায়ের করেছেন।

শেয়ার করুন

Comments are closed.




দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ © All rights reserved © 2024 Protidiner Kagoj |